এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডে দায়ীদের শাস্তি দাবি ১০ সংগঠনের

Passenger Voice    |    ০৭:২১ পিএম, ২০২২-০১-০৮


এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডে দায়ীদের শাস্তি দাবি ১০ সংগঠনের

যাত্রীভর্তি এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড ও হতাহতের ঘটনায় দায়ী সকলের দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ, নাগরিক অধিকার, নৌখাত ও পরিবহন বিষয়ক ১০টি বেসরকারি সংগঠন। নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চার সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত পাঁচ দিনেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৪ জানুয়ারি নৌ প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁরা কেউ-ই রেহাই পাবেন না। তাঁদের সকলকেই শাস্তি পেতে হবে। সেদিন তিনি স্পষ্টভাবে আরো জানিয়েছিলেন, প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট শিপ সার্ভেয়ারসহ (ফিটনেস প্রদানকারী প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক) নৌ পরিবহন অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার পাশাপাশি লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের দায়ী করা করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর এ কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণের পরও দায়ী সরকারি কর্মকর্তারা স্বপদে বহাল থাকায় সচেতন দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে অতীতের মতো এবারও কি প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোাঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন?   

বিবৃতিদাতারা হলেন- নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ সিকদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী এবং পুরনো ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন। 

অতীতের দুটি নৌ দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে বিবৃতিদাতারা বলেন, ২০১৪ সালে পদ্মায় মাওয়ার কাছে এমএল পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনা এবং ২০০৩ সালে চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় এমভি নাসরিন লঞ্চ দুর্ঘটনার পরপর তীব্র সমালোচনার মুখে লঞ্চ দুটির ফিটনেস প্রদানকারী দুই শিপ সার্ভেয়ারকে দ্রুত (তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার আগে) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধেই করা হয়েছিল বিভাগীয় মামলা দায়ের।

কিন্তু এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টির পর নৌ অধিদপ্তর থেকে লঞ্চটির মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা করা হলেও দায়িত্বহীনতার কারণে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনে জমা হওয়ার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, ২৪ ডিসেম্বর গভীররাতে ঢাকা-বরগুনা নৌপথের ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবোঝাই এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা ও বরিশালের হাসপাতালে প্রায় ৮০ জন চিকিৎসাধীন। এছাড়া বহু যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনেরা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ৩ জানুয়ারি নৌ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে অগ্নিকান্ড ও হতাহতের জন্য নৌ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ, পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন এবং একই সংস্থার সদরঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শকসহ লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারকে দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভাররা নৌ আদালতের মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন।